২১ ফেব্রুয়ারি সরকারী ছুটির দিন। ছুটির এই বিকেলে পেগাসাস চৌধুরীর হঠাত রোম্যান্টিক উপন্যাস পড়ার সাধ জাগল। তাই তিনি ছেলের টেবিলে ফেলে রাখা একটি রোম্যান্টিক ধাঁচের বই নিয়ে আয়েশ করে বারান্দায় বসলেন। বসন্তের বিকেলে মৃদু হাওয়া বারান্দায় থাকা গোলাপের পাতাগুলোকে হালকা করে নাড়িয়ে দিচ্ছে। খান্ডালা বেগম প্রতিদিন গাছগুলোতে নিয়ম করে পানি দেন। আজ বিকেলেও দিয়েছেন বেশ কিছুক্ষণ হল, তাই পাতা গুলোকে গারো সবুজ দেখাচ্ছে।
খান্ডালা বেগম পেগাসাস চৌধুরীর স্ত্রী। তাদের সংসার জীবনের ২৬ বছর হতে চলল। কিন্তু এখনো তাদের মাঝে নব্য বিবাহিতদের মত খুনসুটি লেগেই থাকে। রোম্যান্টিক গল্প পড়তে পড়তে পেগাসাস চৌধুরীর মনেও রোমান্টিকতার হাওয়া লাগল। পাশের বাসায় হাল্কা ভলিউমে গান বাজছে "তেরে বিন, নাহি লাগে জিয়া"। উজাইর জাসওয়ালের লেজেন্ডারি গান।
পেগাসাস চৌধুরী হাঁক ছেড়ে খান্ডালা বেগম কে ডাকলেন-
-- প্রিয়তমা শুনছো! একটু এদিকে আসো না!
খান্ডালা বেগম কেবল মেয়ের ঘর গুছিয়ে ছেলের ঘরের দিকে আগাচ্ছিলেন। হাঁক শুনে বির বির করতে করতে বারান্দার দিকে এগুলেন -
-- হু, ঢং দেখো। বুড়ো বয়সে ভিমরতি, কি হয়েছে বলো।
-- আরে রাগ করো কেনো, বয়স বেশি হলেও মনে তো এখনো কাঁচাই আছি নাকি! এক কাপ চা দাও তো!
-- নিজে বানিয়ে খাও, আমি কাজ করছি। যত্তসব।
-- আরে দাও না! ওসব কাজ রাখো তো! আমার আর তোমার জন্য চা বানিয়ে পাশে এসে বসো, একটু গল্প করি।
"আচ্ছা দিচ্ছি, কিন্তু চিনির বদলে বিষ মেশাবো বলে দিচ্ছি" এটা বলে খান্ডালা বেগম গজ গজ করতে করতে রান্না ঘরের দিকে এগুলেন। পেগাসাস চৌধুরী মুচকি হেসে গল্পের বইয়ে মনোনিবেশ করলেন। পাশের বাসার ছেলেটা এখন বেসুরো গলায় আতিফ আসলামের একটি গান গাওয়ার চেষ্টা করছে। চৌধুরী সাহেব একটু বিরক্তই হলেন কিন্তু তিনি মুড নষ্ট করতে চাইলেন না।
[ছেলেটি গান গাওয়া থামিয়ে আবার ইউটিউবে গান ছেড়েছে। একের পর এক বেজেই চলেছে।]
প্রায় ২০ মিনিট পর খান্ডালা বেগম চায়ের ট্রে হাতে বারান্দায় প্রবেশ করলেন।
-- এত দেরী করলে যে!
-- আরে বিষ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে ইঁদুর মারা বিষ মেশালাম।
-- তোমার ভালোবাসায় আমি বিষ খেতেও রাজি।
এই বলে চৌধুরী সাহেব চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঢক ঢক করে চা গিলে ফেললেন। আজকের চা টা একটু কড়া হয়েছে।
পেগাসাস চৌধুরী এখন মাটিতে পরে আছেন। বিষক্রিয়া শুরু হবার পর তিনি চেয়ার উলটে পড়ে যান এবং মাথা ফুলের টবে আঘাত করে ফলে টব ভেঙ্গে মেঝে নোংরা হয়ে যায়। খান্ডালা বেগম এতে খুব বিরক্ত বোধ করছেন। তিনি ঝাড়ু দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করছেন আর বির বির করে বলছেন "বললাম বিষ মেশানো, তারপরেও খেলো। এখন এত ভারী লাশ কিভাবে সরাবো!"।
[এই গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। এই কন্সেপ্টের একটি গল্প আমি অনেক আগে পড়েছিলাম। তাই সেটাই রিরাইটের চেষ্টা করলাম।]